আপনি আপনার মুখের কোন অংশটি সবচেয়ে বেশি সময় নিয়ে সাজাতে পছন্দ করেন?
চোখ।
হ্যাঁ, অধিকাংশ মেয়েই এই জবাবটাই দেয়। চোখ সাজাতে ভালোবাসে না এমন মেয়ে নেই বললেই চলে। চোখের সাজটা যদি সুন্দর না হয় তাহলে সম্পূর্ণ সাজটাই আর ভালো দেখায় না। কিন্তু চোখ সবসময় গাড় আইশ্যাডো, আইল্যাশ লাগালেই যে সুন্দর দেখাবে তা নয়। চোখের নিচের কালো দাগ, ফোলা ভাব, চোখে মেকি মেকাপ এ ঢাকা যায় না। আর সঠিক যত্ন না নিলে ধীরে ধীরে চোখের সৌন্দর্যই ম্লান হয়ে আসবে তার সাথে নানান সমস্যা তো আছেই। আসুন জেনে নিই চোখের রেগুলার কিছু সমস্যা ও এর সমাধান সম্পর্কে।
- চোখের চারপাশে কালো দাগ
রাত জাগা, কম্পিউটারে কাজ করা, নিয়মিত ভারি মেকাপ করা, টেনশন করা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চোখের চারপাশে কালো দাগের সৃষ্টি করে। এই দাগ চোখের সৌন্দর্যই নষ্ট করে দেয়। দ্রুত এর জন্য সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ না করা হলে এই দাগ স্থায়ী এবং খসখসে হয়ে যায়। চুলকানোর মতো সমস্যাও তৈরি হতে পারে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রথমে এর চিকিৎসা করা যেতে পারে। ২-৩টি আলু,অর্ধেকটা শসা থেঁতলে অথবা কুঁচি করে ( চাইলে খোসাসহ অথবা খোসাছাড়া ) ফ্রিজে রেখে দিতে হবে ১৫ মিনিট। তারপর পাতলা রুমালে জড়িয়ে দুই চোখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। তারপর তুলে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহারে কালো দাগ দূর হবে।
– তাছাড়া কাঁচা দুধের ননী প্রতিদিন ৫-৭ মিনিট ম্যাসেজেও ভালো ফল পাবেন।
– ভিটামিন ই সমৃদ্ধ তেল কয়েক ফোঁটা নিন তারপর তা ঠাণ্ডা পানির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
– এসবে কাজ না হলে বাজারের ভালো বডি শপ-এর মত আই ক্রিম ও ব্যবহার করতে পারেন।
- চোখের পাপড়িতে খুশকির প্রভাব
নিয়মিত মেকাপ ব্যবহারের পর ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া ধুলাবালি অথবা অন্যান্য কারণ তো আছেই। এই সমস্যার কারণে চুলকানী, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়ার মতন অসুবিধা দেখা দেয়।
চোখের সৌন্দর্য ধরে রাখুন
চোখের মেকাপ শুধু ধুয়ে ফেললেই হবে না, সঠিক উপায়ে পরিষ্কার করতে হবে। অলিভ অয়েল অথবা গ্লিসারিন তুলোর বলে লাগিয়ে ধীরে ধীরে মাশকারা, আইলাইনার, কাজল, আইশ্যাডো তুলে নিন। তারপর পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর বেবি শ্যাম্পু তুলো অথবা নরম কাপড়ে নিয়ে চোখের পাপড়ি পরিষ্কার করুন। সবশেষে চোখে ৫ মিনিট একটু বরফ ঘষে নিতে পারেন, এতে চোখের ক্লান্তি দূর হবে এবং ফ্রেশ দেখাবে। বেশি সমস্যা বোধ করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- চোখের চারপাশে কুঁচকে যাওয়া
বয়সের কারণে অথবা অনিয়মিত যত্নের কারণে চোখের চারপাশে সূক্ষ্ম রেখা সৃষ্টি হয়। অথবা কুঁচকে যায়, যা খুবই বাজে দেখায়। বেশি গুরুতর পর্যায়ে চলে গেলে ইঞ্জেকশন বা সার্জারির সাহায্য নিতে হয়। তাই একদম শুরুতেই এটি দূর করার সঠিক উপায় অবলম্বণ করতে হবে।
– রোদে যাওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন প্রোটেকশন ব্যবহার করতে হবে।
– নিয়মিত রোদ চশমা ব্যবহার করুন।
চোখের সৌন্দর্য ধরে রাখুন
– উল্টো হয়ে ঘুমালে কুঁচকে যাওয়া সমস্যা দূর হবে, উলটো হয়ে ঘুমাতে না পারলে বারবার সাইড পরিবর্তন করুন। সবসময় এক পাশ হয়ে ঘুমাবেন না।
– চোখের চারপাশের ত্বক বেশ নমনীয়, তাই ক্রিম বা অন্যান্য কিছু এপ্লাই করার সময় জোরে জোরে ঘষবেন না বা টানবেন না।
– নিয়মিত রেটিন-এ ক্রিম ব্যবহার করুন।
- চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া
কোন অ্যালার্জিক রিয়েকশন বা কান্না করার ফলে অনেক সময় চোখ ফুলে যায়। হালকা ব্যথা বা জ্বালাপোড়াও হতে পারে। যা খুবই অস্বস্তিকর। কোন কাজে মন বসে না, মাথা ব্যথা হয় এবং স্পষ্টভাবে কিছু দেখাও যায় না।
– এক গ্লাস বরফ ঠাণ্ডা পানিতে একটি ষ্টিলের চামচ নিয়ে ঠাণ্ডা করুন, তারপর তা চোখে ধরে রাখুন। চামচটি গরম হয়ে আসলে তা আবার ঠাণ্ডা করুন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত ধরুন যতক্ষণ ফোলা ভাব না কমে।
– গ্রিন টি এর ঠাণ্ডা ব্যাগ চোখে ধরে রাখুন, প্রাকৃতিক উপাদান সম্পন্ন এই চায়ের ব্যাগ চোখের ফোলা ভাব দূর করতে বেশ কার্যকরী।
– ঠাণ্ডা শসা এক্ষেত্রে ভালো কাজে আসে।
– ময়েশ্চরাইজার ঘন করে লাগিয়ে রাখতে পারেন।
কিছু টিপস
- নিয়মিত শাক-সবজি, ফলমূল এবং প্রচুর পানি পান করুন।
- একটানা মনিটরের সামনে বসে থাকবেন না, চোখকে বিশ্রাম দিন।
- দিন শেষে চোখের ছোট কিছু পরিচর্যা করুন।
- আইল্যাশ ঘন করতে চাইলে পুরনো মাশকারা ব্রাশ ভালোভাবে পরিষ্কার করে তাতে অ্যালোভেরা জেল ও ক্যাস্টর অয়েল মিক্স করে নিন। ঘুমানোর আগে পাপড়িতে লাগান। ৭ দিনেই ফল বুঝতে পারবেন।
- মাঝে মাঝে চোখে হালকা উষ্ণ পানির ভাপ নরম রুমাল দিয়ে লাগাতে পারেন, এতে চোখের জীবাণু দূর হয়ে চোখ পরিষ্কার হবে।
- দিনে ৫-৬ বার চোখে পানির ঝাপটা দিবেন।
- মাঝে মাঝে সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকবেন।
- টেনশন থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন এবং অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় ঘুমাবেন।
- রাত জাগবেন না।
- চুলের যত্নে যা ব্যবহার করছেন, তা ভ্রূর যত্নেও ব্যবহার করুন। সুন্দর ভ্রূ সুন্দর চোখকে আরও বেশি ফুটিয়ে তোলে।
চোখ সৃষ্টিকর্তার এক অমুল্য দান, তাই একে সুস্থ এবং সুন্দর রাখার জন্য সবসময় চেষ্টা রাখতে হবে।